প্রবল আর্থিক সংকটে টলিউড ছেড়ে আলুর দমের দোকান দিলেন টলিউডের পরিচালক অভিনেতা প্রেমাংশ রায়

প্রদীপের নীচে থাকা অন্ধকারের মতো গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির ভেতরেও যে নানা ধরনের রাজনীতির খেলা প্রতিমুহূর্তে চলে, সেই বিষয়ে প্রায়শই রুপোলি পর্দার অনেক মানুষ মুখ খোলেন। সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে চলা এই রাজনীতির জন্যই ইন্ডাস্ট্রি ছাড়তে বাধ্য হলেন টলিউডের নামকরা পরিচালক – অভিনেতা প্রেমাংশ রায়। ঋত্বিক চক্রবর্তী, ব্রাত্য বসু, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘চিলেকোঠা’ ছবির স্বনামধন্য এই পরিচালক টলিউডে কাজ করার পাশাপাশি থিয়েটারের সুবাদেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। ২৭ বছরের কর্মজীবনে নিজেকে তিলে তিলে তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে দাঁড় করিয়েছিলেন প্রেমাংশ, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে চলা পলিটিক্সের জন্য অবশেষে নিজের তৈরি সেই জায়গা ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ছবিতে নাকি অসংখ্য তথ্য বিকৃতি ঘটেছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনীচিত্র ‘অভিযান’ নিয়ে শুরু বিতর্ক
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে প্রেমাংশ বর্তমানে একটি ফুড কর্ণার খুলেছেন। পয়লা বৈশাখের দিন নিজের এই দোকান খোলার বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানোর পাশাপাশি টলিউড ইন্ডাস্ট্রির বৈষম্যের বিষয়েও মুখ খোলেন পরিচালক প্রেমাংশ রায়।
এইদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের রান্না করার একটি ছবি পোস্ট করে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান পরিচালক অভিনেতা। একইসাথে নিজের অভিনয় ও থিয়েটার জগৎ ছাড়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন প্রেমাংশ? এর উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন,“ প্রথম কারণ হলো নিজস্ব আর্থিক সমস্যা। দ্বিতীয় কারণ হলো পুরোটাই ব্যক্তিগত তাই সকলকে বলা যাবে না। আর তৃতীয় কারণ হলো এত বছর নাট্য যাপনের (ভুল বা ঠিক যেটাই হোক) পর বুঝলাম আমি এখনো মানুষ চিনতে শিখিনি। যদি সাতাশ বছর নাট্য যাপন করে মানুষ চিনতেই না শিখতে পারি তবে আমার নিজেকে নাট্যকর্মী বা শিল্পী পরিচয় দেওয়ায় মানায় না। তবে তার মানে এটা নয় যে আমার কারো নামে কোন অভিযোগ আছে। নিজের ছাড়া কারো নামে কোন অভিযোগ আমার নেই। এই জগতে সকলেই ভালো, আমি ছাড়া।”
আরও পড়ুন: মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে আমিরের ‘গজনী’ ছবির অফার ফিরিয়েছিলেন সুপারস্টার মহেশ বাবু
কারোর নাম করে সরাসরি অভিযোগ না করলেও নিজের বন্ধুও সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে তিনি ইন্ডাস্ট্রির নোংরা রাজনীতির শিকার! নিজের বন্ধু ও সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “ যারা এখনও আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন যাতে আমি আর কাজ না করতে পারি তারা এসব করে ফালতু নিজেদের সময় নষ্ট করবেন না কারণ আমি নিজেই সরে গেলাম আপনারা ভালো মানুষ, ভালো থাকুন, আপনাদের হাত ধরে বাংলা থিয়েটার এগিয়ে যাক।”
তবে রাজনীতির শিকার হয়ে নিজের কর্ম জীবন থেকে তার এইভাবে সরে যাওয়া যে সাময়িক সময়ের জন্য তাও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কিছু সময়ের জন্য নাট্যজগতে থেকে সরে গেলেও একেবারের জন্য সরে যাচ্ছেন না। তিনি আবার ফিরে আসবেন এবং নতুনভাবে ফিরে এসে সমস্ত প্রশ্নের যথাযোগ্য উত্তর দেবেন। পরিচালকের কথায়,“ আমি আপাতত সরে গেলাম নাট্যজগতে থেকে। একেবারে চলে যাচ্ছি না। ফিরবো তো অবশ্যই। কারণ, অনেককে অনেক উত্তর দেওয়া বাকি, মুখোশ খোলা বাকি এবং সবার উপরে নিজের কিছু স্বপ্নের কাজ করা বাকি। ততদিন আপনারা সানন্দে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে, নোংরা রাজনীতি করে, মিথ্যাচার করে, শিল্পীর ক্যারিয়ার অমানুষের মত শেষ করে, চামচাগিরি, করে নাট্য যাপন করতে থাকুন।”