‘অপরাজিত বানানোই অপরাধ!’ সত্যজিতের নন্দনে ব্রাত্য সত্যজিতের জীবনী, ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন ছবির প্রযোজক!

কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ভিত্তিক ছবি ‘অপরাজিত’ জায়গা পেলো না সত্যজিৎ রায়ের নন্দনে। নন্দনের সাথে সত্যজিৎ রায়ের গভীর যোগ রয়েছে। কিংবদন্তি এই পরিচালক নন্দনের নামাঙ্কন পর্যন্ত করেছিলেন, কিন্তু তার জীবনী নিয়ে তৈরি ছবিই ব্রাত্য হয়ে গেলো নন্দনে এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে? এই বিষয়ে ছবির পরিচালক অনীক দত্ত বলেছেন,“এই বিষয়ে আমার কিছু মনে হয় না। কারণ আমি আন্দাজে কোন কথা বলতে চাই না। হতাশ হয়েছি। কারণ আমার তৈরী ছবিগুলি মূলত যারা দেখেন, তাদের একটা বড় অংশ নন্দনে ছবি দেখতে আসেন।”
পরিচালক আরো বলেন,“বঙ্গবাসী সহ আমরা বিভিন্ন কলেজে গিয়েছি। সেখানে সকলের মধ্যে প্রচন্ড উৎসাহ দেখেছি। কিন্তু তারা তো আর মাল্টিপ্লেক্সে পটাপট টিকিট কেটে যেতে পারবেন না। তাছাড়া কিছু অংশ শহরতলী থেকেও আসেন। অবশ্যই একটা বড় অংশের দর্শক ছবিটি দেখতে পারবেন না।” বরাবরই স্পষ্টবক্তা পরিচালক অনীক দত্ত অনেক সময়ই সরকারবিরোধী মন্তব্য করা থেকে সরকারবিরোধী নানা বিক্ষোভ সমাবেশও পা মিলিয়েছেন! সেই কারণেই কি সরকারের প্রেক্ষাগৃহে জায়গা হল না তার ছবির?
এই ছবিটি দেখার পর স্কিনিং কমিটির সদস্যরা ফোন মেসেজ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও কেন নন্দনে অপরাজিতর জায়গা হল না! তা তিনি বুঝতে পারছেন না! তবে আন্দাজে কোন কিছু বলতেও তিনি নারাজ। পরিচালকের কথায়,“ এই পুরো বিষয়টার সঙ্গে রাজনীতির যোগ আছে কিনা আমি জানিনা। যখন বলবো যেমন জোরদারভাবে বলে থাকি, তেমনই বলবো। অকারনে আন্দাজ করব করে কিছু বলবো না।” সরকার বিরোধী মন্তব্য করলেও কাজ ভাল হলে সরকার পক্ষের লোককে নিতেও তার আপত্তি নেই। এই কারণে শাসক দলের সদস্য সায়নী ঘোষকে তিনি বেছে নিয়েছেন সত্যজিতের স্ত্রীর চরিত্রে।
আরও পড়ুন: কোয়েলের ফিটনেসের পিছনে গোপন রহস্য ফাঁস! জিমের আগে কী করেন কোয়েল?
পরিচালকের কথায়,“এই চরিত্রে ওর থেকে ভালো আর কাউকে মানাতো না অনেকেই ছবিটি দেখে সে কথা বলেছেন।” এর পাশাপাশি ছবিতে চরিত্র বাছার ক্ষেত্রে তিনি যে রাজনীতি দেখেন না তার কথাও বলেছেন। পরিচালকের কথায়,“আমি ওভাবে শিল্পীকে বেছে নিই না। আমার ছবিতে অঞ্জনা বসু ও কাজ করছেন তিনি তো বিজেপি। আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি না। যারা ছবিতে রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই আছেন নিজেদের যোগ্যতার জন্য।”
তবে পরিচালক যায় বলুন ছবির প্রযোজক ফেরদৌসল হাসান কিন্তু পরিষ্কার রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। তার কথায়, “আমরা ছবিটা বানিয়ে অপরাধ করে ফেলেছি। আমাদের ছবির কোন যোগ্যতা নেই। বাকিদের হয়তো আছে। তাই আমাদের জায়গা দেয়নি। বিদেশের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের ছবি প্রশংসিত হয়েছে। ওদের মাপকাঠিতে তো হয়তো সেটা যোগ্যতা নয়।” বর্তমানে নন্দনে চলছে তৃণমূল সাংসদ দেবের প্রযোজিত ও অভিনীত ‘কিশমিশ’, যাদবপুরের সংসদ মিমি চক্রবর্তী অভিনীত ‘মিনি’,আর শাসক দলের বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী অভিনীত ‘কলকাতার হ্যারি’- এই তিনজনই শাসকদল ঘনিষ্ঠ! অনাদিকে অপরাজিতর পরিচালক সরকার বিরোধী মন্তব্য করার জন্য পরিচিত।
প্রযোজক বলছেন,“ আমি তো সেটাই বলছি আমি যে ছবিটা বানিয়েছি সেটা তো ওদের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয় নি। তাই ওরা চালাননি। আমাদের ছবিটা হয়তো নন্দনে দেখানোর যোগ্যই নয়। একটা বিশাল সংখ্যক দর্শক এই ছবিটি দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন। এটা অন্যায় নয় এটা অপরাধ। এরকমটা কেন হলো তার যুক্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু জানি দিনের শেষে কেউ কোনো যুক্তি দেখাবে না। কিন্তু এটা অপরাধ।”
এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রাভিনেতা জিতু কমলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই পরবর্তীকালে সবটা বলবেন অভিনেতার কথায়, “এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখন ঠিক করে দিতে পারব না। আমি আমার ছবি নিয়ে ছোট করে বলতে রাজি। কিন্তু এটা নিয়ে বড় করেই বলবো।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অনীক দত্তের এই ছবিটি আগামী ১৩ মে মুক্তি পেতে চলেছে।