সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালীর’ দুর্গার অভিযোগ রেকর্ড সৃষ্টি করা ছবি ‘অপরাজিত’তে তথ্যের বিকৃতি হয়েছে! কেনএমন অভিযোগ আনলেন সত্যজিতের দুর্গা?

বাংলা সাহিত্যের রেকর্ড সৃষ্টি করা ছবি অপরাজিত। কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জীবনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই ছবি। সত্যজিৎ রায় কীভাবে পথের পাঁচালী তৈরি করেছিলেন এবং এই ছবি তৈরী করতে গিয়ে তিনি কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং অবশেষে শেষ পর্যায়ে কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই পুরো ছবি তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘অপরাজিত’। এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন জিতু কমল।
অনীক দত্ত পরিচালিত এই ছবি বাঙালির গর্ব হয়ে উঠেছে। চারিদিক থেকে বক্সঅফিস সাফল্যের খবর পাওয়া যাচ্ছে, এই ছবি মুক্তির প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৪ কোটি টাকা কালেকশন করে ফেলেছে। বাংলা ছবির হাল ফিরিয়ে শুধু মাত্র পশ্চিমবঙ্গেই এই ছবি ৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা আয় করেছে। এই ছবির প্রশংসায় যখন পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছেন সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, তখনই এই ছবিকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠল।
অনীক দত্তের পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবিতে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা অর্থাৎ উমা দাশগুপ্ত। বর্তমানে তিনি উমা সেন। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, “মানিকদা আর আশিস বর্মন আমার বাড়িতে এসেছিলেন। বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন দুর্গা চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে দেওয়ার জন্য। তখন বিজয়া রায় (সত্যজিতের স্ত্রী) আমাদের বাড়িতে আসেননি। আমার নির্বাচনের অনেক পরে আমি মানিকদার বাড়ি গিয়েছিলাম। তখন প্রথম দেখা বিজয়া রায়ের সঙ্গে। দুর্গার ভূমিকায় আমার নির্বাচনের সঙ্গে উনি কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না, আমি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, ১৩ বছর বয়স। ভুল তথ্য দেখানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়”
অনেক আগেই অবশ্য অভিনেত্রী উমাদেবীর মেয়ে শ্রীময়ী অপরাজিত ছবির একটি দৃশ্য কে কেন্দ্র করে অভিযোগ তোলেন। ফেসবুকে পোস্টে শ্রীময়ী লেখেন, “আমার মা উমা দাশগুপ্ত নিয়মিত স্কুল থিয়েটারে অভিনয় করতেন। মায়ের স্কুলের সহ প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচিত। সত্যজিৎ রায় তাকে অনুরোধ করেছিলেন একজন অভিনেত্রী খুঁজে দিতে যে দুর্গা চরিত্র করবে। পারিবারিক বাসভবনে আমার দাদু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে একটা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই বৈঠকে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সর্বজয়া চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তার সঙ্গে আমার মায়ের মিল খুঁজে পান সত্যজিৎ রায়। এরপরের ঘটনা বহু পত্র পত্রিকায় লেখা হয়েছে, আমার দাদু খুবই রক্ষণশীল মানুষ ছিলেন সে সময় বাড়ির মেয়ে সিনেমায় অভিনয় করবে সেটা ভালো চোখে দেখা হতো না। তাই দাদু প্রথমটায় রাজি হননি, পরে অবশ্য তিনি রাজি হন এবং এর জন্য একটা পয়সাও সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে তিনি নেন নি। কিন্তু এই ডকু ফিচার অর্থাৎ অপরাজিত ছবিতে দেখানো হয়েছে অপরাজিত রায়ের বাড়িতে একটি মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে অপরাজিত রায়ের তাকে পছন্দ হয় না পরে অপরাজিত রায়ের স্ত্রী বিমলা তাকে শাড়ি পড়িয়ে সামনে নিয়ে আসলে অপরাজিত দুর্গা হিসেবে এই মেয়েটিকে বেছে নেন।”
শ্রীময়ী আরো লেখেন যে,“ এই ছোট্ট তথ্য হয়তো সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, অন্তত এত বড় মাপের একটি সিনেমার ক্ষেত্রে। তবে আমার মনে হয় পরিচালকের আরো একটু গবেষণা করা উচিত ছিল।”
অপরাজিত তে উমা (দুর্গার আদলে তৈরির চরিত্রের নাম) চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুশা বিশ্বনাথনন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শ্রীময়ী সেন অপরাজিত ছবির দুর্গা চরিত্র সিলেকশনের দৃশ্যের বিষয় নিয়ে অভিযোগ করলেও নেটিজেনরা কিন্তু বিষয়টিকে একবারই অন্যায় মনে করছেন না। তারা মনে করছেন একজন পরিচালক এইটুকু স্বাধীনতা নিতেই পারেন।