বিনোদন

‘ঐশ্বর্য আড়ম্বর ছাড়ুন, ছোট থেকে বাচ্চাকে সহজ-সরল ভাবে বাঁচতে শেখালে দড়ি আর তাদের টানবে না’ তিন অভিনেত্রীর রহস্য মৃত্যু সম্পর্কে তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যের মত

পল্লবী-বিদিশা-মঞ্জুষা তিন অভিনেত্রীর রহস্য মৃত্যুর পর রচনা ব্যানার্জী বলেছিলেন, যারা এই ভাবে নিজেদের শেষ করে দেন তাদের মৃত্যুতে তার কষ্ট হয় না, কষ্ট হয় তাদের বাবা-মায়েদের কথা ভেবে, যারা ছেলেমেয়ে মানুষ করতে চেয়েছিল নিজেদের সঞ্চয় জমিয়ে তারা পরিবর্তে কী পেল? একইভাবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী ও বলেন, এই প্রজন্ম একটু কিছু অসুবিধা হলেই নিজেদের শেষ করে দেওয়ার পথে হাঁটেন এটা অত্যন্ত বিপদজনক। তাদের সময় বহু নামী অভিনেত্রী ও একটার বেশি ছবি করেননি হয়তো, কিন্তু তারা কেউই এইভাবে নিজেদেরকে শেষ করার পথ বেছে নেন নি! একইভাবে এই তিন জনের রহস্য মৃত্যুর পর মত রেখেছিলেন শ্রীলেখা মিত্র‌ও। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন তো এই তিন মৃত্যু-রহস্য কে নিয়ে ক্রমাগত কাটাছেঁড়া করছে। সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য মুখ খুললেন এই বিষয় নিয়ে।

আরও পড়ুন: ঈশ্বর আমাদের জুটি নিজের হাতে বানিয়েছেন! শুভকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা, আমার জীবনের সব কিছুর মূলে শুভ! বললেন রাজ চক্রবর্তী

এই মৃত্যু তাকেও ভাবাচ্ছে। তিন অভিনেত্রীর রহস্য মৃত্যুর পর একটি লম্বা পোস্ট করেন দেবাংশু। তিনি মনে করেন এই মৃত্যুর পিছনে আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রাও কিছুটা দায়ী। সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখা সেই পোস্টে তিনি জানান, টাকা পয়সায় জীবনের সবকিছু নয় বরং সহজ সরল জীবনযাপন করতে শেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশুর কথায়,“লাইফ-স্টাইল একটু সহজ সরল রাখুন। নিজেদের আশপাশ অতিরিক্ত আড়ম্বরে মুড়ে ফেলবেন না। হাতে টাকা এলেঈ লোক দেখিয়ে খরচা করে নিজেকে কেউকাটা দেখাতে যাবেন না। চতুর্দিকে আমাদের বয়সী ছেলে মেয়ে গুলো নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। কী কী কারণ আছে জানিনা তবে জীবন যাত্রার মান ভীষণভাবে উপরে উঠিয়ে দেওয়ার পর যখন আর্থিক সংকটে আসে তাকে মেনটেন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন সর্বনাশা ডিপ্রেশন চেপে ধরতে বাধ্য, যার পরিণাম শেষ কয়েক সপ্তাহের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম!”

আরও পড়ুন: সিন্দুক থেকে গয়না চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার খড়ি! ঋদ্ধি কে পাশে পাবে তো খড়ি নাকি শুরু হবে খড়ির একার লড়াই?

দেবাংশু আরও লিখেছেন যে, কীভাবে নিজের জীবন যাত্রার মান সাধারন করতে হবে- “লোকদেখানো বৈভব দিয়ে কি হবে? হয়তো যাকে বা যাদেরকে দেখাচ্ছেন ভেতরে ভেতরে তারাও ভীষণ ফাঁপা হয়ে আছেন কী লাভ তাহলে? কৃত্তিম সুখের প্যালেস সাজাতে গিয়ে জীবন থেকে রামধনু হারিয়ে যাচ্ছে না তো? শিশির ভেজা ধানের শীষ হারিয়ে যাচ্ছে না তো? টাকা আজ আছে কাল নেই। গদিতে ঘুমানো একবার অভ্যাস করে ফেললে কাঠের চৌকিতে পিঠ ছোঁয়াতে পারবেন না আর কখনো। তাই একটু সংহত হোন। পাঞ্জাবি ফেটে গেলে সেলাই করে পড়তে শিখুন, মোবাইল ভেঙে গেলে সারাই করে ব্যবহার করুন, যতদিন করা যায়।”

যুক্তি দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন সাধারন জীবনযাত্রা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায়,“মায়েরা খাওয়ার শুরুতে সবসময় তেতো খাওয়া শিখিয়েছেন যেন পরের পদ গুলোর স্বাদ বেড়ে যায়। কিংবা আগে সুস্বাদু খাওয়ালে জিভকে অভ্যস্ত করিয়ে পরবর্তীতে তেতো খাওয়ার কষ্ট যেন সহ্য করতে না হয় মায়েদের ওই খেতে শেখানোটা কিন্তু আদতে বাঁচতে শেখানো”

ছোট থেকেই শিশুদেরকে জীবনে বাঁচতে শেখাতে হবে, সকলের সাথে মিশতে দিতে হবে এই কথায় বলেছেন দেবাংশু। তিনি বলেছেন, “এই প্রজন্মের সকলে মিলে একটা আদর্শ জীবনযাত্রার সর্বাত্মক আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। ছেলেমেয়েদের বাইরে খেলতে পাঠান, মারামারি করুক, চুলোচুলি করুক, আবার একে অন্যকে পেয়ারা পেড়ে খাওয়াক একটু কাদামাটি মাখুক, ছোট থেকে শিশুদের মিশতে দিন সবার সাথে।‌যেমন মাটি পাবে তার বাহার কিন্তু তেমনি হবে। চারাগাছ রোদ বৃষ্টি না পেলে কিন্তু মরে যায়। এসি রুমে ফাইবারের প্লেটে গাছ বাঁচে না।”

অতিরিক্ত আরম্ভর জৌলুষপূর্ণ ঐশ্বর্যে মোড়া জীবন নয়, সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হতে হবে সকল মানুষকে ছোট থেকেই, ছোট ছোট জিনিসকে উপভোগ করতে শিখতে হবে তাহলে আর নিজের জীবন শেষ করার মতো সিদ্ধান্ত কেউ নেবে না বলে মনে করেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। বারংবার জনসাধারণের কাছে তার আবেদন, “ঐশ্বর্য মোড়া চার দেয়ালের বাইরে বেরিয়ে আসুন। একটু মন খুলে বাঁচি। একটু ঘামের গন্ধে একটু সাধারন ছন্দে। চারচাকা ছেড়ে একটু রিক্সায় উঠুন, হাওয়া পাবেন। দেখবেন রিক্সার টানের চোটে দড়িটা আর আপনাকে টানবে না।”

Related Articles

Back to top button