প্রথম টেলিভিশনে মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে দেখা কি ছিল সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় কে, আজ এত বছর পর কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি?

সামনে দুর্গাপূজা কিন্তু তার আগে আসে মহালয়া। মহালয়া এখন প্রতিটি চ্যানেলে দেখানো হয়। মহিষাসুর বদের কাহিনী শোনার জন্য আজও দর্শক অপেক্ষা করেন সারাটা বছর। প্রথমে মহালয়া রেডিওতে শোনা যেত, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠের মহালয়া শুনলে আজও কাঁটা দিয়ে ওঠে। কিন্তু রেডিওতে তো শুধুমাত্র শোনা যায় দেখা তো আর যায়। না তাই শোনো এবং দেখার মাধ্যম হিসেবে মহালয়া তুলে ধরা হলো প্রথম টেলিভিশনে। তখন টেলিভিশন একটাই চ্যানেল দূরদর্শন। সেখানেই খবর, সিনেমা, ধারাবাহিক সব দেখানো হত এই একটি চ্যানেলে। প্রথম দর্শন কেন্দ্রীয় মহালয়া শুরু হয় টেলিভিশনে।
১৯৯৮ সালে প্রথম শুরু হয় এই দর্শন কেন্দ্রীয় মহালয়া। দেবীর ভূমিকায় সংযুক্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা চৌদ্দ বছর তিনি মা দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার জায়গায় কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। তার চোখে মুখের সেই এক্সপ্রেশন শরীরের অঙ্গভঙ্গি টানা টানা চোখের চাহনি সবকিছু মুগ্ধ করত দর্শককে। তাকে দেখে যেন স্বয়ং মনে হতো জ্যান্ত দুগ্গা উঠে এসেছেন। তবে আর কেন দেখা যায়নি সংযুক্ত দেবীকে? ১৯৯৮ সালে যখন তার কাছে প্রথম মা দুর্গার রূপে অভিনয় করার সুযোগ আসে তখন তিনি কলেজের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় গুরু গোবিন্দন কুট্টির ফোন আসে তার কাছে। তিনি বলেন বিকেলে কলামন্ডলে শাড়ি পড়ে আসতে হবে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন তার সমস্ত বন্ধুরাও উপস্থিত।
এরপর সকলের ইচ্ছাতে সংযুক্তা দেবী কে মহালয়ায় দুর্গার রূপ বাছাই করা হয়। টানা দু’মাস কঠিন রিহার্সাল এবং ওয়ার্কশপের পর অবশেষে শুটিং হয়। ডিরেক্টর-প্রোডিওসার ছিলেন শমির্ষ্ঠা দাশগুপ্ত। ডাঃ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির স্ক্রিপ্টে তৈরি হয়েছিল টেলিভিশনের প্রথম মহিষাসুরমর্দিনী। সংযুক্তা ছিলেন একজন ভারতনাট্যম শিল্পী। তাই জন্যই তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি স্টেপ সবকিছুই দর্শকের মনে আজও গেঁথে রয়েছে।
বর্তমানে সংযুক্তা থাকেন কানাডায়। আজ অনেকে দেখলে তাকে মহালয়ার সেই অভিনয় করার অনুরোধ করেন। বর্তমান সময়ে অনেক -অভিনেত্রীরাই মহালয়া দুর্গার রূপে সেজে উঠেছিলেন কিন্তু সংযুক্তার মতো কেউই পৌঁছাতে পারেনি সেই জায়গায়। তার অভিনয় করা দৃশ্যগুলি আজও দর্শকদের চোখের সামনে ভাসে। গায়ে কাটা দেওয়া মহিষাসুর বধের সেই দৃশ্য ভুলতে পারেনি কেউ।