‘হাতে কাঁচা টাকা পেতেই ফুর্তি শুরু, এই মেয়েগুলোর জন্য এতটুকু কষ্ট হয় না’! তিন অভিনেত্রীর মৃত্যুতে মুখ খুললেন রচনা ব্যানার্জি

পল্লবী-বিদিশা-মঞ্জুষা এই তিনের রহস্যমৃত্যুর কথাতে রচনা ব্যানার্জী যত না বেশি কষ্ট পান তার থেকেও বেশি কষ্ট পান এদের বাবা-মায়েদের কথা ভেবে। কষ্ট পান এই তরুণ প্রজন্মের পরিণতির কথা ভেবে, অসহিষ্ণুতার কথা ভেবে। টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জীর কথায়,“জীবনের বাস্তব রূপ ওরা দেখতে পেলেন না। জীবন কি সেটা উপলব্ধি ও করতে পারলেন না। তার আগেই সব শেষ। ওরা সব কিছুই খুব সহজে পেয়ে গিয়েছিলেন। সবকিছুই প্লেটে সাজিয়ে মুখের কাছে দিতে হবে। কিছুই করব না, অথচ কাজ চাই। সবটাই পেতে হবে। এই ইচ্ছে পূরণ না হলে মনের মধ্যে অবসাদ কাজ করছে। এরা কেউ এটা বুঝতে চাইছে না যে সাফল্য পাওয়ার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। প্রত্যেকের জীবনে স্ট্রাগলটা খুব জরুরী। এই স্ট্রাগল করতে চাইছে না কেউ। সবটাই চটজলদি চাই। এটাই আসল সমস্যা। খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমরা। আমাদের সময়টাই এখন নেই। আমাদের শিকড়টা খুব মজবুত ছিল এদের তা নয়। ক্লাস টেন টুয়েলভ এর পরেই মেয়েরা সিরিয়াল করতে চলে আসছে। কিছু কাজ করার পরেই হাতে কাঁচা টাকা এসে যায়। ব্যস ফুর্তি শুরু। এটা তো আর জীবন নয়! সেটা তাদের কে বোঝাবে?”
এখানেই থেমে থাকেননি রচনা। তিনি এইসব সন্তানদের বাবা-মায়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন, অভিনেত্রী বলেছেন এইসব ক্ষেত্রে যারা বাবা-মায়েদের দোষ দেন, তারা জানেন না যে এইসব ক্ষেত্রে বাবা মায়েদের কোন দোষই থাকে না। তিনি বলেছেন,“পৃথিবীতে এমন কোন বাবা-মা নেই যারা সন্তানের ভালোটা চান না। তারা ভালো পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করে যান সব সময়। সেটা সন্তান শুনবে কিনা সেটা তো তার সিদ্ধান্ত। সেটা না শুনলে এই পরিণতি হবে। পল্লবী বা যে কেউ হোক সকলের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এক। যে বাবা-মা তাদের মানুষ করল ওরা তাদের কথায় ভাবলো না। আমার এই মেয়েগুলোর জন্য বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় ওদের বাবা মায়ের জন্য। তারা তো কোন দোষ করেননি।”
অন্যের জন্য নিজের জীবনকে শেষ করার নীতির বিরোধী রচনা। তিনি মনে করেন সুন্দর জীবনকে উপভোগ করতে হয়, লড়াই করে জীবনে টিকে থাকতে হয়। রচনার কথায়,“জীবন খুবই সুন্দর। সেটাকে শেষ না করে উপভোগ করা উচিত। তারপর তো জীবনে কী পেলাম আর কী পেলাম না তার তুল্যমূল্য বিচার করব! একটা ছেলের জন্য জীবন দিয়ে দেবো? সে আমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করবে কেন? জীবনের এক শতাংশ জায়গা তার। তাকে এতটা গুরুত্ব দেবে কেন?”
এরপর এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাউন্সেলিং প্রসঙ্গে কথা বলেন রচনা, “আমি জানি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাবা মাকে নিজের শত্রু বলে মনে করে। তাদের কাছে বন্ধুরাই আসল। তারাই সব। তারা কিন্তু কেউই ভালো বন্ধু নয়। তারা ফেয়ার ওয়েদার ফ্রেন্ডস। পার্টি, হুল্লোড়, মদ, সিগারেট এসব যতদিন আছে, তারাও ততদিন আছে। আমার মনে হয় আজকের প্রজন্মকে স্কুলে গ্রুমিং করানো উচিত। তাদের নিয়ম করে কাউন্সেলিং করা উচিত। বাবা-মার কথা তো শোনেই না। স্কুলের কথা শুনে যদি কিছু হয়।”
সমস্ত পরিস্থিতি দেখে রচনা ব্যানার্জীর বারবার এটাই মনে হয়েছে যে এই নয়া প্রজন্ম খুব খারাপ দিকে এগোচ্ছে। তাদের ঠিকমতো কাউন্সিলিং করা দরকার। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা মনে করে তারা ঠিক বাবা-মা ভুল,রচনা নিজের ছেলের প্রসঙ্গ তুলে আনেন এই ক্ষেত্রে, “এদের কথা কি বলবো আমার নিজের ছেলেই বেয়াড়া হয়ে গিয়েছে। তাকে যত বোঝাচ্ছি সে মানতে নারাজ। তার দাবি সে ঠিক আমি ভুল। আমার বোঝানো কাজ, সেটা শুনবে কিনা ওর ব্যাপার। বুঝতে পারলে ভালো না বুঝলে ব্যাডলাক। এই মেয়ে গুলির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। বাবা-মা গুলোর জন্য খুব খারাপ লাগে, তারা তো কষ্ট করে রোজগার করে মানুষ করেছিল। তার এই আউটকাম? কাজ না পেলে গলায় দড়ি দিয়ে ফেলবো ?একটা ছেলে দুবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তার থার্ড ওয়াইফ হয়ে থাকতে শুরু করব? এসব কি হচ্ছে? এদের ভালো করে কাউন্সেলিং করা দরকার।”