“আমার এক ফোঁটা আবেগ নেই। আমি আবেগ পছন্দও করি না।” – সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয়ের পরেও এই দাবি কিউ এর!

পরিচালক কিউ- এর সাথে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের এক দ্বন্দ্বের কথা প্রায় সবার জানা। একসময় পরিচালক কিউ , বাঙালির আবেগের সাথে জড়িত কালজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্কে কিছু অশালীন ভাষাও প্রয়োগ করেছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কিউ একেবারে সত্যজিৎ বিরূপ ছিলেন সেই তিনিও স্বয়ং এবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনীচিত্র ‘অভিযান’-এ সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন! ছবির পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এই সম্পর্কে জানিয়েছেন, বাহ্যিক সাদৃশ্য বিচার করলে কিউয়ের এর সাথে পরিচালকের সত্যজিৎ রায়ের এক অসম্ভব মিল রয়েছে যা আর কারোর মধ্যে দেখা যায়না। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক তাঁর কি মত, কিংবদন্তির চরিত্রে অভিনয় করতে ঠিক কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে জানিয়েছেন নিজেই।
আরও পড়ুন: ৫৯ বয়সে এসেও ছেলের মতই ফিট বুম্বাদা! পিছনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই
পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ১০১ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল পরিচালক তথা অভিনেতা কিউ এর সাথে। তিনি জানিয়েছেন, পরিচালকের মতে যেহেতু সত্যজিৎ রায় সবার কাছে এক ডাকে পরিচিত সেইসঙ্গে তাঁর নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে সত্যজিৎ রায়ের আচরণ একেবারেই বেমানান। তাই ছবিতে অভিনয় করতে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সম্পূর্ণ আচরণ নিজের মধ্যে ধারণ করতে তাঁকে যথেষ্ট প্রশিক্ষনের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। চরিত্রের মধ্যে দিয়েই দিন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। কিংবদন্তির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এখন পর্দায় একসাথে তিনজন ‘ সত্যজিৎ ‘রায় রয়েছেন।
অভিযান’ ছবিতে কিউ। অতনু বসুর ‘অজানা উত্তম’-এ প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়। অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’-য় জিতু কমল অভিনয় করেছেন। কিউ এর কাছে সরাসরি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, পরিচালকের সাথে মিল এবং অভিনয়ের দিকে বিচারে কোন্ ‘সত্যজিৎ ‘ অধিক পরিচালকের কাছে পৌঁছেছেন। সেই নিয়ে এবারও তিনি একেবারে স্পষ্ট জবাব জানিয়েছেন, প্রিয়াংশুর অভিনয় তিনি এখনও দেখেননি, তবে নিজের ক্ষেত্রে তিনি পরিচালককে নিয়ে ইতিমধ্যেই পড়াশোনা করেছেন তাই তিনিই পরিচালকের অনেকটা কাছে মন থেকে পৌঁছতে পেরেছেন। কিউ এর বরাবরের আপত্তির বিষয় ছিল বাঙালির সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে আবেগ।
আরও পড়ুন: মিতিনমাসি কোয়েল ৪০ এ পা দিলেন এইবছর! অন্য বারের চেয়ে তাই আলাদা জন্মদিন সেলিব্রেশন
এবারেও কিউ এর দাবি, তাঁর এতটুকুও কোনো আবেগ কাজ করেনি। তিনি আবেগ পছন্দ একেবারেই করেন না। বাঙালির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,বাঙালি আবেগ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। তিনি নিজে ভেতর থেকে আবেগের পরিবর্তে অভিনয় নিয়ে বেশি ভেবে থাকেন। তাঁর মতে আবেগ নিয়ে পড়ে থাকলে ভয় পেয়ে শেষে চরিত্রের সাথে একাত্ম হওয়াই সম্ভব হবেনা। তবে পর্দায় অভিনয়ের পর নিজের ভালো দিক মন্দ দিক দুটোই একসাথে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। নিজেকে কিছু কিছু দৃশ্যে যেমন তাঁর মনের মত লেগেছে তেমন ভাবেই আবার তিনি মনে করেছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি অভ্যাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যেত।
বাঙালির সর্বাধিক বৃহৎ আবেগ সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে তাঁর দাবি, বাংলা ছবি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা সত্যজিৎ রায়। তার থেকেও বড় সমস্যা তাঁকে ঘিরে আমাদের অনুভূতিগুলো। সত্যজিৎকে ঈশ্বরতুল্য বানিয়ে নিজেদের সমস্যা আমরা নিজেরাই ডেকে এনেছি। জাপান, আমেরিকায় প্রচুর সত্যজিৎ রায়। ওরা একজনে সন্তুষ্ট নয়। ফলে, একজনকে আঁকড়ে তারা তাকে ঈশ্বর বানায়নি। সময়ের দাবি মেনে প্রতি দশকেই নতুন পরিচালক এসেছেন। তাঁদের কাজে ওদের ইন্ডাস্ট্রি সমৃদ্ধ। বাংলায় সেটি হচ্ছে না। তাই এই দুরবস্থা।’’ এই কারণ দেখিয়েই তিনি দাবি করেছেন সত্যজিতের কোনো ছবিই তাঁর পছন্দের নয়। এমনকি ওই সমসাময়িক কারোর ছবির ভক্ত তিনি নন।