নেগেটিভ ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে করতেই হারিয়ে গিয়েছিলেন, পাননি যোগ্য সম্মান টলিউডে অভিনয় দক্ষতায় থাকলেও! শেষ নিশ্বাস অবধি রয়ে গেছিলো সে যন্ত্রণা একসময়ের দাপটে অভিনেত্রী গীতা দের

গীতা দে এই নামটি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত নামগুলির মধ্যে একটি। বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক তার জীবন সম্পর্কে কিছু কথা। এই বিখ্যাত খল নায়িকার জন্ম ১৯৩১ সালের ৫ ই আগস্ট। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে মঞ্চে অভিনয় করার কর্মজীবন শুরু হয় তার। ১৯৩৮ সালে “আহুতি” সিনেমাতে তিনি প্রথম শিশু অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মাত্র ছ বছর বয়সেই ধীরেন গাঙ্গুলী পরিচালিত আহুতি সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেন তিনি। জানা যায় অভিনেত্রী প্রায় ২০০ বেশি সিনেমাতে অভিনয় এবং ২০০০ এর বেশি নাটকে অভিনয় করেছিলেন।
অভিনেত্রী ১৯৫৪ সালে যুক্ত ছিলেন অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে শ্রুতি নাট্যকার হিসেবে। সেখানেও তিনি রেডিও নাটকে একাধিক চরিত্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। এরপরে অভিনেত্রীর শেষ নাটকে অভিনয় করেন ১৯৯৬ সালে। এই ভারতীয় অভিনেত্রীর শেষ নাটকের নাম “বাদশাহী চাল”। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় “তিন কন্যা” এবং ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় “মেঘে ঢাকা তারা”, “সুবর্ণরেখা”, “কোমল গান্ধার”, “কতো আজনারে” এর মত কিংবদন্তি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্তের সাথে ” পরিণীতা” নামের হিন্দি চলচ্চিত্রে এবং অন্যান্য চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি আরো বিভিন্ন ধরনের সিনেমা নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন। আবার অনেক সিনেমাতে করেছেন খলনায়িকার চরিত্র। সেই খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই দর্শকের পছন্দের খল নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন দয়াময়ী।
যদিও সিনেমাতে তিনি নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলেও প্রশংসা করিয়েছেন অনেক তাবড় তাবড় অভিনেতাদের। এক কিংবদন্তি কৌতুকশিল্পী তথা অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তার জীবনীতে গীতাদের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, “গীতা দে ভীষণ শক্তিশালী অভিনেত্রী। ও ভালো গানও জানে। ওর অভিনয় জীবন শুরু শ্রীরঙ্গমে, খুব ছোটবেলায়। তারপরে শিশির ভাদুড়ির কাছে নাট্য শিক্ষা ও একই সঙ্গে নাটকে অভিনয় করা। সিনেমাতেও ক্যারেক্টার অ্যাক্ট্রেস হিসেবে দুর্দান্ত অভিনয় করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ডাইনি’।”
সারা জীবন ধরে উল্লেখযোগ্য এবং বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, শিশির ভাদুড়ি, দেবো কি পুরুষদের মত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন। সারা জীবনে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। তিনি ডাঃ এপিজে আব্দুল কালামের কাছ থেকে আজীবন কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তার আজীবন অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল সাইয়িদ নুরুল হাসানের কাছ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারকা পদক পান। বাংলা চলচ্চিত্র ও থিয়েটারে আজীবন অবদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন।
সারা জীবন ধরে উল্লেখযোগ্য এবং বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, শিশির ভাদুড়ি, দেবো কি পুরুষদের মত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন। আবার সাম্প্রতিক সিনেমা “চিরদিনই তুমি যে আমার” এও বেশ নজর কারা অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী। অসুস্থ থাকার পরেও অভিনয়ের মাধ্যমে লাইট ক্যামেরা একশন এর সামনে নিজেকে স্বমহিমায় বজায় রেখেছিলেন তিনি। এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী গীতা দে কলকাতায় ২০১১ সালে ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।