রাত ভোর অপেক্ষা করিয়ে নবাগত বলে প্রত্যাখ্যান করেন পরিচালক! খিদে চেপে লড়াই করেই আজ জিতু ‘অপরাজিত’

মানুষ যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন তাকে নিয়ে সবাই মেতে ওঠে কিন্তু প্রতিটি বিখ্যাত মানুষের জীবনের ভেতরে একটি করে ক্ষত থাকে একটি করে স্ট্রাগল থাকে, খ্যাতির পর্যায়ে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত তাকে লড়ে যেতে হয়, সেই লড়াইয়ের কথাটা খুব কম মানুষই জানতে পারে। এইরকম লড়াই করেছিলেন জিতু কমলও। সত্যজিৎ রায়ের জীবনী ভিত্তিক সিনেমা ‘অপরাজিত’তে সত্যজিতের ভূমিকায় কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছেন জিতু কমল, এই ছবি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, সন্দীপ রায় থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রত্যেকেই নাম করেছেন জিতুর অভিনয়ের। কিন্তু এই মানুষটির জীবনেও কিন্তু কম লড়াই ছিল না। অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে যে লড়াই তিনি করেছিলেন সেই লড়াইয়ের কথায় তিনি নিজের মুখে তুলে ধরলেন ‘দ্য বং আনটোল্ড’ ইউটিউব চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: সবই নকল! মাথার টাক নকল চুল দিয়ে ঢেকেই ফিটনেস আইকন অক্ষয় কুমার! কিন্তু কেন এমন অবস্থা হলো অভিনেতার?
ইন্ড্রাস্ট্রিতে প্রথমদিকে একটা কাজ পাওয়ার জন্য তাকে তীর্থের কাকের মত হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হতো, সেই সব দিনের কথা জানাতে গিয়ে জিতু বলেন, “একটা সময় শুধু মাত্র একটা কাজ পাওয়ার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকতে হয়েছে পরিচালকের দরজায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলে তিনি জানান আজ হবে না, কাল এসো। ফের গিয়ে সকাল থেকে বসে রয়েছি, ফের এক কথা শুনতে হয়েছে। জায়গা থেকে নড়িনি এই ভেবে যে, আমি উঠলেই যদি সেই সময়েই উনি ডাকেন!”
দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছেন তিনি, তার বদলে পেয়েছেন শুধুই প্রত্যাখ্যান, জিতুর কথায়, “এক পরিচালক ডেকে বললেন, কী করেছো ভাই কাজ আগে? বললাম, কিছুই না। উনি বললেন, কিছুই করোনি, নতুন তাহলে হবে কী করে?” নতুনদের কে সুযোগ না দিলে তারা পুরনো কী করে হবে এই প্রশ্ন বারবার মনে উঁকি দিয়েছে অভিনেতার, তিনি বলেছেন, “একটা ছেলে পুরোনো তো তখন হবে যখন তাকে সুযোগ দেওয়া হবে! সেটাই দেওয়া হয় না। আর যদি কাজ না থাকে তাহলে কেন রোজ রোজ ডেকে অপেক্ষা করানো? তারপর বলে দেওয়া আজ হবে না!”
না খেয়ে না দিয়ে তিনি পরিচালকের দরজায় ঘুরে বেরিয়েছেন, এরপর যখন তিনি একটা চান্স পেলেন, সিরিয়ালে কাজ পেলেন তখনও তার লড়াইটা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। অভিনেতা বলেন, তিনি যখন সিরিয়ালে কাজ করতেন তখন রাত্রে বেলায় গাড়ি তাকে ড্রপ করতে আসত গাড়ির মধ্যে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তেন জিতু অন্যদিকে ডানলপ আসতেই গাড়িচালক বলতেন,“ এসে গেছে, এসে গেছে”। বাড়ি এসে গেছে ভেবে লাফ দিয়ে নেমে পড়তেন জিতু এরপর চোখ মুছে তাকিয়ে দেখতেন রাত দেড়টার সময় তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় জিতু নিজের বাবা-মায়ের সাথে সোদপুরে থাকতেন, এত রাত্রে বাড়ি ফেরাটাও সেই সময় তার কাছে কঠিন হয়ে পড়েছিল। অভিনেতা বলেন, “সেই সময় ওলা উবের ছিল না। ওই রাত্রে ট্যাক্সিও নেই কীভাবে যাব বাড়ি? শেষ পর্যন্ত একটা ট্যাক্সি পেয়ে ভোররাতে বাড়ি এসে বাবার থেকে টাকা চেয়ে দিতে হয়েছে।”
নিজের বাবা-মার প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, তার বাবা-মা ভেবেছিলেন, ছেলে টলিউডে যাচ্ছে নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে কিন্তু জিতুই একমাত্র জানতেন টলিউডে নিজের মাটি শক্ত করার লড়াইটা ঠিক কতখানি ভয়ঙ্কর ছিল! কিন্তু অভিনেতা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে তিনি কিছু করে দেখাবেন তাই তিনি সেটাই করে দেখেছেন। সবশেষে জিতু বলেন, “কিভাবে টাটা সুমোর পিছনের সিট টা থেকে ইনোভার প্রথম সিটে বসতে হয় তা আমি জানতাম। মন দিয়ে লেগে ছিলাম। অভিনয় করার জেদটা ছাড়িনি।” দ্য বং আনটোল্ড অভিনেতার ভিডিওটি পোস্ট করার সময় ক্যাপশনে লিখেছিলেন “সেদিনের রিজেক্টেড ছেলেটাই আজ অপরাজিত”- জিতুর ক্ষেত্রে সত্যিই অপরাজিত নামটি সার্থক হয়ে উঠেছে!