“যে যন্ত্রণা, যে ব্যাথা সহ্য করতে দেখেছি, তা অচিরেই থেকে যাবে? “- জিতু কমল থেকে কালজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায় হওয়ার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কোন সত্য সামনে আনলেন নবনীতা!

পর্দার এপারে বসে থাকা আমরা দর্শকরা প্রতিনিয়ত মনে করে থাকি ওদিকে থাকা মানুষ গুলো অতি সহজেই অভিনয়ের সবটা করে ফেলছেন। অত্যন্ত হালকা ভাবে সম্পূর্ণ বিষয়টাকে নিয়ে থাকি। কারণ প্রতিনিয়ত পর্দার ঐদিকে থাকা শিল্পীরা আমাদের মনোরঞ্জন করে চলেছে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন একজন প্রকৃত শিল্পী হয়ে উঠতে ওনাদের ঠিক কতটা আত্মত্যাগের পথ দিয়ে যেতে হয়। বোধহয় না! আমরা কেউই এত গভীর চিন্তা করে দেখিনি কখনোই। তবে সিনেমার এদিকে যতোটা দেখি সেই দৃশ্য সামনে আনতে যে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী দের কতোটা সাধনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেই কথা আবারও প্রমাণ করলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জিতু কমল।
কালজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে জিতু কমল যে অভিনয় করতে চলেছেন এই বিষয়ে খবর বহুদিন আগেই সামনে এসেছে। তবে এমন একজন শিল্পী মানুষের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য যে কতোটা নিজেকে মানসিক ভাবে তৈরি করে নিতে হয় সেকথা বোধহয় যিনি এই সম্পূর্ণ সময়টা অতিবাহিত করেছেন তিনিই বলতে পারবেন। চরিত্রের সাথে মিলেমিশে একাত্ম বোধ গড়ে তোলাটা যেখানে সবার আগে জরুরী। অভিনেতা জিতু কমল অভিনয়ের স্বার্থে নিজেকে যে চরিত্রের সাথে একেবারে মিশিয়ে ফেলেছেন এই কথা নিজেই টের পাননি। চেহারার মধ্যে মেকাপ ছোঁয়া দিয়ে মিল স্থাপনের চেষ্টা করেছেন সোমনাথ কুণ্ডু।
তবে এতদিন পর যে অজানা সত্য সামনে এসেছে সেই সত্য প্রকাশ করেছেন অভিনেতার স্ত্রী নবনীতা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের মাধ্যমে চরিত্রের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতে জীতুকে ঠিক কি কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে সেই বর্ণনাই করেছেন। সমস্ত কিছু মিলে যাওয়ার পরেও একটা বিষয়ে জিতুর সাথে পরিচালকের মিল হচ্ছিল না। সত্যজিৎ রায়ের দাঁতের মাঝে মাঝে ঠিক যেমন ফাঁকা ছিল ঠিক এই ক্ষেত্রে জিতুর সাথে ঠিক মিলছিল না। তাই একদিন একেবারে কাউকে কিছু না জানিয়েই তিনি দাঁতের ডাক্তারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন এমনকি স্ত্রী নবনীতা কে পর্যন্ত জানতে দেননি যাতে সে ভয় পায়।
তারপরেই দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শে ঠোঁটে, মাড়িতে ইনজেকশনের দ্বারা ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে দাঁতে ঠিক একইভাবে ফাঁকা তৈরি করেছিলেন। সেই ছবি ভিডিও করে নবনীতা কে পাঠিয়েছিলেন। পরিচালককে নিজের মধ্যে একেবারে সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলে তিনি এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে পর্যন্ত। যেখানে দাঁতের মারি কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে সেইসাথে দীর্ঘদিন ধরে অভিনেতা খেতে, কথা বলতে পর্যন্ত পারেননি সমস্ত কষ্ট মুখ বুজে আছে করেছেন কেবল চরিত্র যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে। দাঁতে ড্রিল মেশিন চালানোর কারণে অভিনেতার দাঁতের জোর কমে যাওয়ায় লেবুর রস , নরম খাওয়ার খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অর্থাৎ এর থেকেই প্রমাণিত একজন অভিনেতা হতে গেলে ঠিক কতটা ত্যাগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।