জন্ম না দিয়েও মা! ৫ মাসে মাতৃহারা পরাণকে স্তন্যপান করিয়ে বড় করেন পিসি!

মাতৃত্ব এমন একটা বোধ যা সর্বজনীন। তাই আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মা আছেন যারা জন্ম না দিয়েও মায়ের কর্তব্য পালন করেন। নিজের সন্তান এবং পরের সন্তানের মধ্যে ভেদ করেন না, মাতৃত্ববোধে উজ্জ্বল এই সকল মায়েদের মধ্যেই একজনকে পেয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বর্ষীয়ান অভিনেতা পরান ব্যানার্জি।
ইন্ডাস্ট্রির মহারথী পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যার কাছে ভালোর কোন চূড়ান্ত মাত্রা নেই, তাই তার চিরকালের কথা, ভালো তবু আরো ভালো করতে হবে। ভালো থেকে উত্তরোত্তর আরো ভালোর দিকে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষটি একদিনেই পরাণ ব্যানার্জি হননি, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মহারথীদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠার পেছনে যার শিক্ষা পরাণ ব্যানার্জি কে ঘিরে ছিলো, তিনি হলেন পরাণ ব্যানার্জীর মাতৃসমা পিসি। মা মারা যাওয়ার পর বুকের দুধ খাইয়ে এই পিসিই তাকে সন্তানস্নেহে বড় করেছিলেন। বর্ষীয়ান অভিনেতার জীবনে তাই পিসির অবদান অনেকখানি।
তার জীবনে যে ধরনের চরিত্রেই আসুক না কেন এত নিখুঁত ভাবে স্বকীয়তার সাথে তুলে ধরেছেন পরান ব্যানার্জি, যে আট থেকে আশি সকলেই মুগ্ধ হয়ে যায় তার অভিনয়ে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না তার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা কষ্টগুলো। আসলে তার বেড়ে ওঠাটা আর পাঁচটা শিশুর মত নয়, জন্মের ৫ মাসের মাথায় মাকে হারিয়েছিলেন অভিনেতা। মা হারা সেই শিশুকে অভিনেতার পিসিমা কমলাদেবী স্তন্যপান করিয়ে মানুষ করেন। তাকেই মা বলে মানেন এবং ডাকেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরাণের পিতৃসম পিসতুতো দাদা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় পরাণ ব্যানার্জির যাবতীয় আবদার মেটাতেন। ভাইকে স্নেহ করার পাশাপাশি ভাই বেয়াদবি করলে শাসনও করতেন তিনি। এই কারণেই বর্ষীয়ান অভিনেতা বলেন, মা না থাকার কষ্ট কোন দিনই টের পাননি তিনি। তাই তার মনে হয়, জন্ম দিলেই কেবল মা হওয়া যায় না, মাতৃত্ব একটা বোধ, যেটা থাকলে জন্ম না দিয়েও অপর সন্তানকে সন্তানস্নেহে বড় করা যায়।
পিসিও পিসতুতো দাদার আদরে বড় হওয়া পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তার বাবার বন্ডিং খুব একটা ভালো নয়। অভিনেতা তার বাবার প্রতি সেভাবে কোন টান অনুভব করেননি, কখনো-সখনো গ্রাম থেকে এসে বাবা অভিনেতার সাথে দেখা করতেন। বাবার হাত ধরে শৈশবের মেলা দেখা, বাবার গলার গান আজও মনে পড়ে আশির কোটা পেরিয়ে যাওয়া এই অভিনেতার। সেই অর্থে বাবা হয়ে উঠতে পারেননি তিনি অভিনেতার কাছে, তাকে তাই কাকা বলেই ডাকতেন অভিনেতা। বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কলকাতাতেই তাই পারলৌকিক কাজ সেরে ফেলেছিলেন তিনি।