ক্যামেরার সামনে প্রণাম করলেও অফ ক্যামেরায় থাপ্পর মারতো প্রসেনজিৎ, দাবি অনামিকা সাহার

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে খল নায়িকার চরিত্র হোক অথবা মমতাময়ী মা সবেতেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অনামিকা সাহা। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার বয়সে তিনি মা, জেঠিমা, ঠাকুমা, দিদিমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কোন কালেই তিনি নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি, মা, জেঠিমার চরিত্রে অভিনয় করবেন বলেই ইচ্ছে করে নিজের ওজন বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন এমনটা করেছিলেন অভিনেত্রী?
আরও পড়ুন: সৌরভের সামনেই যশের গায়ে ঢলে পড়লেন নুসরত! পরের বছর কাকে আনবেন-খোঁচা নেটিজেনদের
অনামিকা সাহা বলেন, তার গলা সুন্দর ছিল বলে শ্বশুর বাড়ির লোক তাকে বলতো রেডিওতে নাটক করবার জন্য। এইসময় ৫০০০ এরও বেশি নাটক করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার মেয়ে হওয়ার পরে তার আর এই কাজ ভাল লাগতো না, তখন তিনি শ্বশুরমশাইয়ের অনুমতি নিতে চান অভিনয় করবার জন্য। অনামিকা সাহার কথায়, “ শ্বশুর মশাই আমাকে বললেন ‘আমাদের কোন প্রেজুডিস নেই কিন্তু এমন কোন চরিত্রে অভিনয় করো না যেটা আমাদের বসে দেখতে খারাপ লাগে।’ এইবার আমি ভাবলাম নায়িকা হলে বুকে জড়াজড়ি করতে হবে, বিছানায় শুতে হবে, ক্লোস সিন থাকবেই। তার চেয়ে আমি মা, মাসি, ঠাকুমা, দিদিমার অভিনয় করব। তাহলেই আমি অভিনয় করতে পারবো। আমি অভিনয়টাকে এতোটাই ভালোবাসি।” এরপর তিনি এই কথাগুলি চিরঞ্জিত কে বললে চিরঞ্জিতই তাকে পথ দেখান। অভিনেত্রীর কথায়, “ চিরঞ্জিত আমাকে বুদ্ধি দিলো ‘তুই পান্তাভাত, ফেনা ভাত খেয়ে ঘুমো। মুখটা খাটে ঝুলিয়ে দিয়ে ঘুমো। কারণ আমার গালটা এরকম ফোলা ছিল না, ভাঙ্গা ছিল। চিরঞ্জিত বলতো ‘দেখবি তোর মাংস এসে যাবে তুই মোটা হয়ে যাবি’।”
এরপর চিরঞ্জিতের কথা শুনে মোটা হওয়ার চেষ্টা করলেন অভিনেত্রী। নিজের এই চেষ্টার প্রসঙ্গে বলেছেন,“চিরঞ্জিতের কথা আমি শুনেছিলাম। সত্যি সত্যি দেখলাম তাই হল। আমার সিজার বেবি হল। এক্সারসাইজ করতাম না, বেল্ট পড়তাম না। এইসব করে মোটাসোটা হয়ে ফিরলাম অভিনয়ে। মোটা না হলে তো পাঠ করতে দিচ্ছিল না আর অভিনয় না করে আমি থাকতে পারছিলাম না। আমার ভাল লাগত না।”
আরও পড়ুন: ঠাকুর ভেবে লিওনার্দোর মোনালিসাকেই মালা ও ধূপ দিলো গৌরী
যাদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনামিকা, সেই সকল অভিনেতাদের সাথে বয়সের ব্যবধানও তার বেশি ছিলো না। অনামিকা সাহার কথায়,“ অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ৫৮ বছর বয়সে চলে গেল আমার বর্তমান বয়স ৬৩ বছর। কিন্তু আমি ওর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ফলে ওরা সকলেই আমার বন্ধুর মত। বুম্বা আমাকে ক্যামেরার সামনে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতো, তারপরই থাপ্পড় মারতো। এই রকম মজাদার সম্পর্ক ছিল আমাদের। এইরকমই ৩-৪ বছরের ব্যবধান ছিল আমার সঙ্গে ওদের বয়সের। তাপস পাল ছিল আমার চেয়ে একবছরের বড়।”
এরপর ‘বেদের মেয়ে জ্যৌৎস্না’ থেকে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘জামাই রাজা’, ‘মায়ের আঁচল’ ইত্যাদি একের পর এক সুপার ডুপার হিট ছবিতে অভিনয় করে অনামিকা দর্শকদের মনে স্থান করে নিলেন। তবে শুধু অভিনয়ই নয়, অভিনয়ের পাশাপাশি ডাবিংও করতেন অভিনেত্রী। মুম্বাইয়ের যত হিরোইন এসেছিলেন বিজয়েতা পন্ডিত, জুহি চাওলা সকলের ডাবিং করেছিলেন তিনি।