জীবনের শেষ নিঃশাস পর্যন্ত করে গিয়েছেন অভিনয়! ২৪ শে জুলাই ছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী, শেষ নিঃশ্বাস অবধি অভিনয় করেছেন মহানায়ক, রইল কিছু “উত্তম কথা”

সকলের প্রিয় মহানায়ক উত্তম কুমার। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে তার নাম ছিল অরুন কুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯২৬ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার আহেরীটোলায়। সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় ও চপলা দেবীর ঘর আলো করে আসেন অরুণ। মায়ের গুরুমা অরুণকে কোলে নিয়ে তার হাসি দেখে বলেছিলেন, এই ছেলের হাসি হবে জগৎ বিখ্যাত। ছেলের নামেই পরিচিত হবে মায়ের নাম। কলকাতার সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।
বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অরুন। উত্তম গৌরী দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায়। গৌরব চট্টোপাধ্যায় উত্তম কুমারের একমাত্র নাতি। তার নাতনির নাম নবনীতা চট্টোপাধ্যায়। ১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন, তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
অভিনয় জগতে আবির্ভাব ঘটে নীতিন বসু পরিচালিত দৃষ্টিদান এর হাত ধরে। তবে সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমায় সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়ী আসন লাভ করেন অভিনেতা। এরপর একের পর এক করে গেছেন জনপ্রিয় সোনাঝরা যুগের সিনেমা। পিছন ফিরে তাকাননি কোনদিন। বাঙালির স্টাইল স্টেটমেন্ট বলতে তখন উত্তম সেরা। আর তার সাথে তার হাসি। রোমান্টিক ইমেজে দর্শক পাগল থাকতেন উত্তমের জন্য। তার অসাধারণ কর্মজীবন নিয়ে লিখতে বসলে আজকে শেষ হবে না সেই লেখা।
দীর্ঘ কর্মজীবনে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন বহু উল্লেখযোগ্য সিনেমা। একই সাথে তিনি ছিলেন অভিনেতা, চিত্রপরিচালক, প্রযোজক,। যেমন – সাড়ে চুয়াত্তর, হারানো সুর, পথে হলো দেরি, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষা, সাগরিকা, নায়ক, চিড়িয়াখানা, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, দেয়া নেয়া, সন্ন্যাসী রাজা, এছাড়াও আরো অনেক কিছু। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত, দেশপ্রেমী ও মেরা করম মেরা ধরম অন্যতম। উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। তার পরিচালিত সিনেমা গুলি হল কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, বনপলাশীর পদাবলী ও শুধু একটি বছর ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে। সংগীতের প্রতিও ছিল তার গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা। সঙ্গীতপ্রেমী উত্তম কাল তুমি আলেয়া ছবির সবগুলো গানের সুরারোপ করেন। ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়।
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, চিড়িয়াখানা, দোসরের মতো সিনেমায় অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার হাতে তুলে নেন। এই জাতীয় পুরস্কার এর তৎকালীন নাম ছিল ভরত। বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর টালিগঞ্জ অঞ্চলের স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে “মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন”। “মহানায়ক” উপাধিও পেয়েছিলেন তিনি।এছাড়াও আরো বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন মহানায়ক।
২৪ শে জুলাই সকলের প্রিয় মহানায়ক উত্তম কুমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সালটা ছিল ১৯৮০। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেদিন গোটা বাংলা কেঁদেছিল চোখের জলে। জানা যায় ওগো বধূ সুন্দরী সিনেমার শেষ দিনের শুটিং এই বুকে ব্যথা উঠেছিল অভিনেতা। কিন্তু বুঝতে দেয়নি তিনি কাউকে। শেষ দিন শুটিং সেটেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি। এরপরেই তাকে ভর্তি করা হয় কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিন যদি তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানাতেন তবে হয়তো অত তাড়াতাড়ি হারাতে হতো না মহানায়ককে। বলা হয় সেই শিল্পী ভাগ্যবান যে শেষ নিঃশ্বাস অবধি নিজের শিল্পকর্মে ডুবে থাকেন। মহানায়ক উত্তম কুমার ও ঠিক সেই রকম এক ভাগ্যবান শিল্পী যিনি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অভিনয় করে গেছেন।