‘ও বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, ঘুমিয়ে গেলেন নাকি… ভাতা পেয়ে দাতার ভয়ে লজ্জা পাওয়া বাকি’! কবিতার মাধ্যমে বাংলার বুদ্ধিজীবী মানুষের বিরুদ্ধে সরব হলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ

টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। বাংলা সিনেমা দেখেন এমন দর্শকেরা রুদ্রনীল কে পছন্দ করেন না এমনটা হয়তো হয় না। এই রুদ্রনীল অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন রাজ্য রাজনীতির সাথে। বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে বিভিন্ন পোস্ট এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্ত রেখেছেন নিজেকে। এবারে আরও একবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বরচিত লেখনী মুখে বলে পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই একই রকম ধরনের কাজ এর আগেও তিনি বহুবার করেছেন। মূলত তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করেন। যেটি হয় সাদা কালো। সেই ভিডিওতে সম্পূর্ণ লেখোরিটি তার স্বরচিত। এবং সেটি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বলে প্রকাশ করেন অভিনেতা। বিভিন্ন সময়ে এ কাজের জন্য তিনি কটাকে সম্মুখীন হয়েছেন। আবার কখনো বহুল প্রশংসিত হয়েছেন।
এই বারের বক্তব্যে অভিনেতা বলেছেন, “ও বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, ঘুমিয়ে গেলেন নাকি… ভাতা পেয়ে দাতার ভয়ে লজ্জা পাওয়া বাকি। দিচ্ছ কাকে ফাঁকি। বুদ্ধিজীবী, আপনারা নাকি বাংলার মুখ, আপনারা সব বিবেক… মানুষ নিয়ে ভাবেন নাকি… তা হোক এগারোর রিমেক। পড়ছে মনে? এগারোতে… এখন মুখ কুলুপ এঁটে ওড়ান কিসের ফানুস। বাংলার মা বিস্মিত আজ মাটি জুড়ে লজ্জা… মানুষ চিনছে লুটেরাদের… বাংলার শরশয্যা… ও বুদ্ধিজীবী… ও বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, কবি ওহে বঙ্গভূষণ… ডাকছে মানুষ, মানুন পথে সারান বঙ্গদূষণ… কয়লা বালি ত্রাণ চুরিতে আপনি ছিলেন চুপ… ভোটের পরে মরল মানুষ… কই জ্বালেননি তো ধূপ… আপনারা চুপ বলেই এরা মারল আনিস খান, বুক ফুলিয়ে বগটুই হয়… বাংলার মুখ ম্লান… আপনারা মুখ খুললে পরে হত না হাঁসখালি… প্রতিবাদে ভয় পেত চোর… বাঁচত গেরস্থালী। চোরের মায়ের বড় গলা… রোজ মঞ্চে… চোরের মায়ের বড় গলা রোজ বলে যায় মিথ্যে… চোর জেলে যায়, মা তবু চুপ… মা শুধু চায় জিততে। বুদ্ধিজীবী বলছে মানুষ আপনারা সব বিক্রি হয়ে গেছেন… ভাতা, চেয়ার, খয়েরি খামে মত্ত হয়ে আছেন…ও বুদ্ধিজীবী আর কত লুট হলে পড়ে খুলবে তুমি মুখ… তাবেদারি ছাড়বে তুমি মানুষ তো উন্মুখ… টিভি দেখছেন না… খবর দেখছেন না… জানেন না বাংলায় কী হচ্ছে… লুটের টাকার পাহাড় দেখেও পাচ্ছে নাকি লজ্জা… কাদের কাঁধে হাত রেখেছেন… ঘুণ ধরা কি মজ্জা… কিন্তু এই আপনারা অন্য রাজ্যে সামান্য কিছু হলে ইউপি-বিহার-দিল্লি নিয়ে মোমবাতি নেন হাতে… আর বাংলা লুঠে খোলেন না মুখ নামেন না রাস্তাতে… ও বুদ্ধিজীবী… হে বাঙালি আর কাঙালি হবেন কত আর… গ্রাম শহরে দিন দুপুরে দুর্নীতি কারবার… ও বুদ্ধিজীবী… তোমায় প্রমাণ দিতেই হবে বিক্রি তুমি হওনি… মিছিল চেয়ে তোমার দিকে সামনে তুমি হাঁটবে… ঠিক এগারোর মতো আবার বাংলার মেঘ কাটবে… তোমার হাত ধরে…”
প্রসঙ্গত এখানে তিনি বুদ্ধিজীবী সমাজকে শব্দের শাণিত তীরে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন। ২০১১ সালে যেমন একাংশ বুদ্ধিজীবী সমাজ সরব হয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে , অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সেই বুদ্ধিজীবী সমাজকেই তিনি বলতে চেয়েছেন সাম্প্রতিক এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন তারা সরব হন।
প্রসঙ্গত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুর্নীতি কাণ্ডে গরম রয়েছে রাজ্য রাজনীতি। এসএসসি দুর্নীতিতেও নাকি যুক্ত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে ঠিক কি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের রাজ্য? সম্প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তার বিভিন্ন বান্ধবীদের। প্রাক্তন মন্ত্রীর দুটি ফ্ল্যাট মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সম্পত্তি পাওয়া গেছে। বিপুল পরিমাণ সোনা, বিদেশী মুদ্রা, সোনার কলম ও মূর্তি সমেত আরো অনেক কিছু। তেমনি অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে আন্দোলনকারীদের ৫০০ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এইসব ঘটনার মধ্যে টানটান উত্তেজনা চলছে রাজ্যে। ২০১১ সালে বর্তমান শাসকদলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং স্বেচ্ছাচারিতাও অরাজকতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন যে একদল বুদ্ধিজীবী, তাদের দিকেই শব্দের শানিত তীর শুনলেন বর্তমান বিজেপি কর্মী তথা জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে রাজ্যের এই দুর্নীতির ঘেরাটোপ কবে কাটবে?